নিজস্ব প্রতিবেদক :: হঠাৎ করে সিলেটের বাজারে জন্ডিসের ইঞ্জেকশন কনাকিয়নের সংকট দেখা দেয়ায় তার কদর বেড়েছে সীমাহীন। এ সুযোগে একটি সিন্ডিকেট চক্র কোম্পানির সরবরাহ বন্ধের অজুহাত দেখিয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে এই ইঞ্জেকশন। ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে চওড়া দামে কিনছেন।
জন্ডিসে ইঞ্জেকশন কনাকিয়ন এর পূর্বের মূল্য ২০ থেকে ১’শত টাকা হলেও সরবরাহ কম থাকার অজুহাত দেখিয়ে বর্তমানে ৪’শত থেকে ৬’শত টাকা কোথাও তারাও অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে। জানা যায়, বিদেশী ঔষধের প্যাকেটে বিক্রয়মূল্য না থাকায় ফার্মেসী মালিকরা ইচ্ছামতো মূল্য নিয়ে থাকেন।
প্রাথমিক পর্যায় শিশু বা প্রাপ্ত বয়স্ক কারো জন্ডিস ধরা পড়লে ডাক্তাররা ফাইটোমেনাডিওন গ্রুপের ইঞ্জেকশন দিয়ে থাকেন। জন্ডিসের ইঞ্জেকশন কনাকিয়ন দেশের বাহিরে উৎপাদিত ইঞ্জেকশন। একই গ্রুপের ইঞ্জেকশন ইনসেপ্টা কোম্পানির কেএমএম-১০, যার মূল্য ৪৫ টাকা ও স্কয়ারের কে-১ এমএম, মূল্য ৪৫/৫০ টাকা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিদেশী ওই কোম্পানির ঔষধ আমদানীকারকের যোগসাজশে একটি চক্র সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পকেট কাটছে ভুক্তভোগীদের।
বিদেশ ভ্রমণ কিংবা নানা উপঢৌকন পাবার লোভে একশ্রেণীর ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে দিনেরপর দিন লিখে যাচ্ছেন বিদেশী কিংবা নাম সর্বত্র কোম্পানির ঔষধ ও ইঞ্জেকশন। সুযোগ সুবিধা কম পাওয়ায় দেশীয় তৈরি সল্প মূল্যের ঔষধ বা ইঞ্জেকশন প্রেসক্রিপশনে লিখতে তাদের রুচিতে বাধে।
ডাক্তারি পেশা মহান ও সেবামুলক হলেও অধিকাংশ চিকিৎসক ব্যবসায়ীক মনোভাবে চেম্বারে দেখছেন রোগী। ডাক্তারদের চেম্বারে অনেক সময় রোগীর চাইতে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ বেশি দেখা যায়। রিপ্রেজেন্টেটিভরা ঔষধের স্যাম্পল ও নানা উপঢৌকন নিয়ে গল্পগুজবে সময় নষ্ট করেন। অথচ অনেক রোগী সিরিয়ালে আছেন সেদিকে নজর নেই কারো।
অনেক ডাক্তার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিয়ম বহির্ভূতভাবে ক্লিনিক, ফার্মেসীতে দেখছেন রোগী। প্রেসক্রিপশনে ঔষধসহ যাবতীয় কম্পিউটারে লিখে দেয়ার কথা থাকলেও মানছেন না সে নিয়ম। আর প্রয়োজন বা অপ্রয়োজনে দিচ্ছেন নানা পরীক্ষা। তাদের নির্ধারিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা না করালে অধিকাংশ ডাক্তার দেখেন না রিপোর্ট। অভিযোগ রয়েছে, বেশি কমিশন পেতে বিশেষজ্ঞবিহীন নামসর্বস্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীকে পাঠানো হয় পরীক্ষা করাতে।
এদিকে রোগীদেখার ফি বাদে বিভিন্ন কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের দেয়া স্যাম্পল ঔষধ বিক্রির টাকা, ডায়াগনস্টিকের কমিশনের টাকা পাবার পরও নানা অখ্যাত কোম্পানির স্পন্সরে বিদেশ ভ্রমণের জন্য আশায় থাকেন। কোম্পানিগুলোও ওইসব ডাক্তারদের দিয়ে ঔষধ সাপ্লাইর টার্গেট পূরণ করছে।
আর সে কারণে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ নানা দেশে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কয়েকলক্ষ মানুষ চিকিৎসা জন্য ছুটছেন। এসব বিষয়ে যেমন নষ্ট হচ্ছে দেশের সুনাম তেমনি বেনামী ঔষধ সেবনের ফলে দেখা দিচ্ছে নানা জটিল রোগ। দ্রুত বাড়ছে কিডনির সংখ্যা। চিকিৎসার এসব বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে মনিটরিং করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে এগিয়ে আসার আহবান ভুক্তভোগীদের।
এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা: প্রেমানন্দ মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নৈতিকতা থাকলে রোগীর সবদিক চিন্তা করে ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশনে ভালো কোম্পানির ঔষধ লিখবেন ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করাতে বলবেন। তথ্যপ্রমাণসহ কেউ অভিযোগ করলে অভিযুক্ত ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।